ইতিহাসের পাঠশালায় • পর্ব-১

মানবসভ্যতার ইতিহাস: আদি হতে অন্ত ইতিহাসের গল্পের শুরুতেই যে প্রশ্নটি আমাদের সামনে চলে আসে সেটি হলো মানুষের ইতিহাসের শুরু কোথা থেকে? এর উত্তর পেতে হলে যে বিষয়টি জানা প্রয়োজন তা হলো, মানুষ যতদিন ধরে এই পৃথিবীতে বিচরণ করছে তার বড় অংশেরই কোন ইতিহাস নেই। ইতিহাসের পূর্বের এই সময়কালকে বলা হয় প্রাগৈতিহাসিক যুগ। প্রাগৈতিহাসিক যুগের মানুষের জীবনের গল্প কোন লিখিত দলিলে পাওয়া যায় না। কারণ সে যুগের মানুষ লিখন পদ্ধতির কথা জানত না। তাই প্রাগৈতিহাসিক যুগ সম্পর্কে যা জানা যায় তা মূলত সে যুগের হাতিয়ার, তৈজসপত্র, অলংকার ও গুহাচিত্র থেকে পাওয়া। লিখন পদ্ধতির উদ্ভাবনের মধ্য দিয়েই মূলত ইতিহাসের পথে মানুষের যাত্রা … Continue reading ইতিহাসের পাঠশালায় • পর্ব-১

ইতিহাসের পাঠশালায় • পর্ব-২

প্রাচীন মিশরের গল্প তখন ১৭৯৯ সাল! মিসরের ‘রোজেটা’ বা রশীদ নামের জায়গায় তাবু গেড়েছে সম্রাট নেপোলিয়নের সৈন্যরা। এখানে পরিখা খনন করতে যেয়ে তারা হঠাৎ পেয়ে যায় কালো ব্যাসাল্টের এক প্রকান্ড পাথর! পাথরের মসৃণ পাশে বিভিন্ন প্রাচীন লিপি আঁকা। সৈন্যবাহিনীর প্রকৌশলী বোর্সাদ ইতোমধ্যে প্রাচীন মিসরের দুর্বোধ্য লিপির ব্যাপারে খুবই কৌতুহলী হয়ে উঠেছিলেন। তাই পাথরের গায়ে আঁকা লিপিগুলোর অর্থ উদ্ধারে তিনি উঠেপড়ে লেগে গেলেন। কিন্তু কাজটা খুব সহজ ছিল না। তিনি দেখলেন পাথরের গাঁয়ে তিনটি ধাপে ভিন্ন ভিন্ন ভাষায় লেখা হয়েছে। চিত্র: পিরামিড ও স্ফিংস প্রথম ধাপে মিসরের সেই পুরনো ছবি আঁকা হায়ারোগ্লিফিক লিপি। দ্বিতীয় ধাপে ছিল পরবর্তীকালের ডেমোটিক লিপি এবং শেষ … Continue reading ইতিহাসের পাঠশালায় • পর্ব-২

ইতিহাসের পাঠশালায় • পর্ব-৩

প্রাচীন মেসোপটেমিয়ার গল্প ১৮৫০ সালের কথা! ভারতবর্ষে তখনও ব্রিটিশ সরকারের শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়নি; সেখানে চলছে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসন, আর শাসন মানেই তো শোষণ। অনেক ইংরেজ তখন ভাগ্য গড়ার জন্য পাড়ি জমাত ভারতে। এরকমই একজন ইংরেজ ছিলেন হেনরি লেয়ার্ড। শ্রীলংকায় তার একটি ভাল চাকরি হয়ে গিয়েছিল। তাই তিনি রওনা দিয়েছিলেন ভারতের পথে। সোজা পথে জাহাজে রওনা দিলেই পারতেন। কিন্তু হঠাৎ তাঁর কী যে মনে হল! সিদ্ধান্ত নিলেন মেসোপটেমিয়া, পারস্য প্রভৃতি দেশ দেখে স্থলপথে ভারতে আসবেন। এসব দেশ তখন ছিল তুরস্কের ওসমানীয় খিলাফতের অধীনে; তাই অনুমতি নিয়ে তিনি ঢুকে গেলেন ওসমানীয় সাম্রাজ্যে। উত্তর মেসোপটেমিয়ায় বেড়াবার সময় তার মনে হল, এই তো … Continue reading ইতিহাসের পাঠশালায় • পর্ব-৩

ইতিহাসের পাঠশালায় • পর্ব-৪

প্রাচীন হিব্রুভাষীদের গল্প ইতিহাসের প্রসঙ্গ আসলেই আর্যভাষীদের মতই আরেকটি ভাষাভাষী জনগোষ্ঠী আমাদের দৃষ্টি কাঁড়ে, এরা হল হিব্রুভাষী। হিব্রুভাষী ইহুদিদের ইতিহাসটি এতোই পুরনো যে এর সাথে অনিবার্যভাবে প্রাচীন সভ্যতাগুলোর ইতিহাসও জড়িয়ে গিয়েছে। ইহুদি জীবনধারাকে সরাসরিভাবে স্পর্শ করেছে প্রাচীন সভ্যতার প্রধান ধারাগুলো। সেজন্য ইহুদি ইতিহাস যেনো আসলে প্রাচীন মিসরীয়, মেসোপটেমীয়, মেসিডোনীয়, রোমান ও মুসলিম খিলাফতের ইতিহাসেরই অবিচ্ছেদ্য অধ্যায়। ইহুদি ইতিহাসের পথ ধরে হাটলে সামনে এসে দাঁড়ায় হারিয়ে যাওয়া কত সভ্যতার ইতিহাস। মনে পড়ে যায় হারিয়ে যাওয়া দিনের কত গল্প, কত কথা, কত কাহিনী। গল্পের শুরুটা হয় ইহুদিদের আদি পিতা ইব্রাহিমকে দিয়ে। গল্পের গোড়ায় এসে যায় প্রাচীন সুমেরীয় সভ্যতার কথা। কারণ ইব্রাহিম বসবাস … Continue reading ইতিহাসের পাঠশালায় • পর্ব-৪

ইতিহাসের পাঠশালায় • পর্ব-৫

বিধান দিলেন ইষ্রা ইষ্রা! এক ইহুদি ধর্মাচার্যের নাম। তবে ইতিহাসে তাঁর গুরুত্ব শুধুই একজন ধর্মযাজক হিসেবে নয়। কারণ তাঁর রচিত ধর্মীয় বিধান আজ আড়াই হাজার বছর পরেও ইসরাইল-ফিলিস্তিন সংকটের মত একটি আন্তর্জাতিক সমস্যা বাধিয়ে রেখেছে। আচার্য ইষ্রা প্রণীত বিশুদ্ধ জাতিতত্ত্বে উদ্ধুদ্ধ হয়ে আজকের যায়নবাদী ইসরাইল রাষ্ট্র বারবার নিষ্ঠুর গণহত্যায় মেতে উঠছে ফিলিস্তিন ভূখন্ডের নিরীহ আদি বাসিন্দাদের ওপর যারা গত তিন হাজার বছরের ইতিহাসেও কখনও ইহুদিদের প্রতি এ ধরণের কোন রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস প্রদর্শন করেনি। চিত্র: জেরুজালেমের ধর্মগৃহের সামনে দন্ডায়মান ইষ্রা ও তাঁর সঙ্গীরা এ যায়নবাদী নিষ্ঠুরতার মূলে রয়েছে আচার্য ইষ্রার বিশুদ্ধ জাতিতত্ত্বের বিধান যা তিনি প্রবর্তন করেছিলেন ব্যাবিলন থেকে পারস্য সম্রাট … Continue reading ইতিহাসের পাঠশালায় • পর্ব-৫

ইতিহাসের পাঠশালায় • পর্ব-৬

প্রাচীন আর্যভাষীদের গল্প প্রাচীন পৃথিবীর ইতিহাসে সভ্যতার যে অগ্রযাত্রা আমরা দেখেছি তাতে বারবার ঘুরেফিরে এসেছে প্রাচীন মিসরীয় সভ্যতা, মেসোপটেমীয় সভ্যতা, পারস্য সভ্যতা এবং হিব্রুভাষীদের কথা। তৎকালীন পৃথিবীতে আফ্রিকা মহাদেশের একমাত্র সমৃদ্ধ সভ্যতা ছিলো মিসরীয় সভ্যতা। মিসরীয় সভ্যতার মতোই তৎকালীন এশিয়া মহাদেশের মধ্যে সবচেয়ে সমৃদ্ধ সভ্যতাগুলো গড়ে উঠেছিলো প্রাচীন মেসোপটেমিয়ায়। মেসোপটেমীয়ায় সর্বপ্রথম কিছু বিচ্ছিন্ন শহর নিয়ে গড়ে উঠেছিলো প্রাচীন সুমেরীয় সভ্যতা। এরপর প্রাচীন ব্যাবিলন নগরীকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে আমোরীয়দের প্রাচীন ব্যাবিলনীয় সভ্যতা, নিনেভা শহরকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে অ্যাসিরীয় সভ্যতা এবং নতুন ব্যাবিলন নগরীকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে ক্যালদীয় সভ্যতা। চিত্র: শিল্পীর তুলিতে আর্য (ভারতীয়) বসতি মেসোপটোমীয় সভ্যতাগুলোর পরে আসে … Continue reading ইতিহাসের পাঠশালায় • পর্ব-৬

ইতিহাসের পাঠশালায় • পর্ব-৭

হেলেনীয় ও হেলেনিস্টিক সভ্যতার গল্প ভারতবর্ষে যেমন রামায়ন-মহাভারত ইউরোপে তেমনি ইলিয়াড আর ওডিসি সবচেয়ে পুরনো মহাকাব্য। ভারতবর্ষে আগত আর্যদের রচিত রামায়ন-মহাভারতের সাথে গ্রিক আর্যদের রচিত ইলিয়াড-ওডিসির দারুন মিল দেখা যায়। পুরনো দিনে গ্রিক চারণ কবিরা মুখে মুখে গান করে ইলিয়াড-ওডিসির বীরদের বিভিন্ন বীরত্বের গল্প শুনিয়ে বেড়াতেন। যতদূর জানা যায়, হোমার নামে একজন চারণ কবি এই দুটি কাব্যের রচয়িতা। কিন্তু হোমার আসলে কে ছিলেন তা নির্দিষ্ট করে বলা যায় না। তিনি কোন দেশের কোন শহরে বাস করতেন তা নিয়েও পন্ডিতদের মাঝে মতবিরোধ রয়েছে। হোমারের রচিত এ দুটি মহাকাব্য ছাড়াও হেসিয়ড নামে আরেকজন কবির রচিত ‘ওয়ার্কস এন্ড ডেইজ’ এবং ‘বার্থ অব দি … Continue reading ইতিহাসের পাঠশালায় • পর্ব-৭

ইতিহাসের পাঠশালায় • পর্ব-৮

রোমান রিপাবলিকের অভ্যুদয় ইতিহাসের সবচেয়ে জনপ্রিয় চলচ্চিত্র Ben Hur যারা দেখেছেন তাদের নিশ্চয়ই মনে পড়বে জেরুজালেমের রাজপথে রোমান সৈন্যদের কুচকাওয়াজের দৃশ্যের কথা। অত্যাচারী রোমান শাসনের দাপটের কাছে কী অসহায়ভাবে বন্দী ছিলো জেরুজালেমের জীবন! এই বন্দী জীবনে সান্তনা ও আশার বার্তা নিয়ে আবির্ভূত হয়েছিলেন সেমেটিক ধর্মগুরু যিসাস। কিন্তু ইতিহাসের নির্মম সত্য হলো যিসাসকে সেমেটিক ইহুদি সমাজের ধর্ম নেতারা গ্রহণ করেননি। ইহুদি ধর্মযাজক ও ফরীশীদের প্ররোচনায় ইহুদি জনসাধারণ এহুদিয়ার রোমান শাসনকর্তা পিলাতের কাছে যিসাসের মৃত্যুদন্ডের দাবি জানায়। এই দাবির মূখে পিলাত যিসাসকে ক্রশবিদ্ধ করার আদেশ দান করেন। এসব ঘটনার কারণে, সেমেটিক ধর্মগুলোর ইতিহাসের সাথে গভীরভাবে জড়িয়ে আছে রোমান সাম্রাজ্যের ইতিহাস। রোমানরাই সেমেটিক … Continue reading ইতিহাসের পাঠশালায় • পর্ব-৮

ইতিহাসের পাঠশালায় • পর্ব-৯

রোমান শ্রেণিসংগ্রাম: ঝড়ের কবলে স্বর্গ ইতালিতে রোমান রিপাবলিকের অভ্যুদয়ের গোড়া থেকেই এ সভ্যতার একচেটিয়া সুবিধাভোগী শ্রেণি ছিল অভিজাতরা। ল্যাটিন ভাষায় এদেরকে বলা হতো প্যাট্রিসিয়ান। প্যাট্রিসিয়ানদের মতো কিছুটা সুবিধা ভোগ করত বণিকরা; বাদ বাকী সকল মানুষ ছিল চরমভাবে সুবিধাবঞ্চিত অথবা শোষিত। স্বাধীন কৃষক অর্থাৎ প্লেবিয়ানরা একটি সুবিধাবঞ্চিত শ্রেণি হলেও তারা অন্তত স্বাধীন মানুষের স্বীকৃতির অধিকারী ছিল যা ক্রীতদাসদের ক্ষেত্রে ছিল অকল্পনীয়। রোমান সভ্যতার সবচেয়ে শোষিত শ্রেণি ছিল ক্রীতদাসরা। চিত্র: রোমান ফোরামের বর্তমান দৃশ্য। এটি ছিল রোম নগরীর কেন্দ্র রোমান সমাজব্যবস্থায় ক্রীতদাসরা ছাড়াও আরেকটি শ্রেণি অভিজাতদের স্বার্থের বলী হয়েছিলো। এরা হলো প্রলেতারিয়ান শ্রেণি। সারা দেশের জমিগুলো অভিজাতদের ল্যাটিফান্ডিয়ার ভেতরে চলে গেলে প্লেবিয়ানদের … Continue reading ইতিহাসের পাঠশালায় • পর্ব-৯

ইতিহাসের পাঠশালায় • পর্ব-১০

বিশ্বজয়ের পথে রোম ৩২৩ খ্রিস্টপূর্বাব্দে আলেকজান্ডারের মৃত্যুর পর তাঁর সেনাপতিরা নিজ নিজ এলাকার শাসনভার গ্রহণ করেছিলেন। অনিবার্য গৃহযুদ্ধের পর সেনাপতিরা নিজ নিজ এলাকায় রাজা হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠা করেন। সিরিয়া অঞ্চলের দখল নেন সেলুকাস নিকাটোর। সেলুকাসের অধীনে সিরিয়া একটি স্বাধীন রাজ্যে পরিণত হয়। এন্টিয়ক ছিলো রাজধানী। সেলুকাসের বংশধরদের বলা হয় সেলুসিড। তাই তাদের রাজ্যকে বলা হয় সেলুসিড রাজ্য। সিরিয়া ও আশপাশের কিছু অঞ্চল জুড়ে বিস্তৃত ছিলো সেলুসিড রাজ্য। এর পাশাপাশি শক্তিশালী রাজ্যের মধ্যে ছিলো টলেমিদের মিসর ও পার্থিয়া (পারস্য)। বর্তমান ইরান অঞ্চলে ছিলো তখনকার পার্থিয়া রাজ্য। জেরুজালেমকেন্দ্রিক ইহুদিদের জুডিয়া রাজ্য ছিলো কখনও টলেমিদের অধীনে আবার কখনও ছিলো সেলুসিডদের অধীনে । চিত্র: … Continue reading ইতিহাসের পাঠশালায় • পর্ব-১০